
এত ভোরে ডোর বেলের শব্দে অনেক কষ্টে চোখ মেললো পার্থ।
- দুশ শালা কে এই সাত সকালে এমনে বেল বাজাইতেসে?
নিজের মনেই বিড় বিড় করে সে। বহু কষ্টে টলতে টলতে এগোলো সে দরজার দিকে। কালরাতে একটু বেশিই টেনে ফেলেছিলো। তার কি দোষ, এইভাবে সামিরার হাতে ধরা খাবে সে কি স্বপ্নেও তা ভেবেছিলো!
দরজা খুলতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো সে। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মূর্তীমান সামিরা। নিজের চোখকেও বিশ্বাস হয় না তার।চোখ কচলে ভালোভাবে তাকাতে চেষ্টা করে। সত্যিই সামিরা তো নাকি মাতলামী ঘোরে বুয়াকেই সামিরা দেখছে। নাহ সামিরাই তো। এত ভোরে তাও কালকের ফাইনাল ব্রেক আপের পর আবার সামিরা আসছে ! নাহ কোনো কিছুই মানে সে কোনো ঘটনার সাথেই কো রিলেট করতে পারে না। মাথা ঝিমঝিম করছে। সামিরা ওর বিধস্থ চেহারার দিকে বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে অবাক হয়ে জিগাসা করে,
-তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে?
পার্থ যেন ভীমরি খায়। আবার চোখ কচলায়। এটা সামিরাই তো ? নাকি সামিরার ভুত? কাল সিলভির সাথে রেস্টুরেন্টে ধরা খাবার পরে যে সব ঘটনা ঘটে গেলো এবং সামিরা রণ রঙ্গিনী মূর্তী ধারণ করে তুলকালাম বাঁধালো এবং শেষমেশ সাক্ষী সাবুদ সহযোগে ফাইনাল ব্রেক আপ। তারপর আজকে তার এভাবে ফিরে আসার কোনো কারনই খুঁজে পাওয়া যায়না। অনেক কষ্টে আমতা আমতা করে ভয়ে ভয়ে বলে পার্থ,
- তুমি এ অসময়ে? মানে এত সকালে!
সামিরা ততোধিক বিস্মিত হয়ে বলে,
-এত সকাল কোথায়? এখন তো ১১টা বাজে। আজ না আমাদের বসুন্ধরা সিনে প্লেক্সে ম্যুভি দেখবার কথা? ভুলে গেলে?
পার্থর চোখ বুঝি ঠিকরে বের হয়ে আসতে চায়। সামিরার মাথা মুথা ঠিক আছে তো! এইটা কেমনে হয়! তবুও সে যত টুকু সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে । সামিরা বলে,
- আমি বসছি তুমি তৈরি হয়ে নাও।
সে ভেতরে ঢুকতে যায়। পার্থর আত্মা উড়ে যায় এইবার। ভেতরের যা অবস্থা সামিরা নিশ্চয় খুন করবে ওকে।
সে ভয়ে ভয়ে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। সামিরাকে বসতে বলে। সামিরা ওর রুমে ঢুকে ওর চেহারার চাইতেও বিধস্থ রুমটার দিকে বিমর্ষ চোখে তাকিয়ে থাকে। চারিদিকে সিগারেটের প্যাকেট, খাবারের উচ্ছিষ্ঠ, থালা গ্লাস ছড়ানো। ওকে আড়াল করে দক্ষ ম্যাজিশিয়ানের মত পার্থ বেডের একসাইডে রাখা ব্লাক লেভেলের বোতলটা বিছানার নীচে পা দিয়ে ঠেলে চালান করে দেয়।
বুকের মধ্যে গুড় গুড় করতে থাকে ওর। দেখে নাই তো সামিরা? এই মাইয়ার চোখ থাইকা তো একটা মাছিও পালাতে পারেনা। মাছি তো তবুও বড় প্রানী, অনুবীক্ষন যন্ত্র ছাড়াই এই মাইয়া ব্যাকটেরিয়ার শরীরের নিঁখুত বর্ণনা দিয়া দিতে পারবে অনায়াসে।
সে আড়চোখ তাকায় সামিরার দিকে। কিন্তু সামিরা এমনই উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে । মনে হয় আজকে খেয়াল করে নাই। দ্বিধা-দ্বন্দ সত্বেও এক ফোটা আশা জমে থাকে পার্থের হৃদয়ে। সে তৈরী হতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




